ভিক্ষা করে ১৮ লক্ষ, সাড়া পড়ল আরামবাগে
মারা গেলেন অমরনাথ দে। রেখে গেলেন পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা, দুটি সরকারি ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট, কিষাণ বিকাশ পত্র, পোস্ট অফিসে সঞ্চয় আর জীবন বীমার নথি। বাড়িতে নগদ হাজার পনেরো টাকা, দুটি সোনার আংটি, দুটি মোবাইল ফোন। সব মিলিয়ে অন্তত ১৮ লক্ষ টাকা। না, চাকরি বা ব্যবসা করে নয়। ফাটকা, চিটিংবাজি বা তোলাবাজি কস্মিনকালেও করেননি। অমরবাবু টাকা করেছেন স্রেফ ভিক্ষে করে। তাঁর মেয়েরা অবশ্য বাবার এমন সঞ্চয়ের কথা আদপেই জানত না।
নিজস্ব প্রতিবেদন
১৭ অগস্ট, ২০১৪
৩২ শ্রাবণ ১৪২১ রবিবার ১৭ অগস্ট ২০১৪ | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ সর্বোচ্চ : ৩১.২°C সর্বনিম্ন : ২৪.৫°C
অমরনাথ দে
মারা গেলেন অমরনাথ দে। রেখে গেলেন পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা, দুটি সরকারি ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট, কিষাণ বিকাশ পত্র, পোস্ট অফিসে সঞ্চয় আর জীবন বীমার নথি। বাড়িতে নগদ হাজার পনেরো টাকা, দুটি সোনার আংটি, দুটি মোবাইল ফোন। সব মিলিয়ে অন্তত ১৮ লক্ষ টাকা।
না, চাকরি বা ব্যবসা করে নয়। ফাটকা, চিটিংবাজি বা তোলাবাজি কস্মিনকালেও করেননি। অমরবাবু টাকা করেছেন স্রেফ ভিক্ষে করে। তাঁর মেয়েরা অবশ্য বাবার এমন সঞ্চয়ের কথা আদপেই জানত না। পারলৌকিক কাজের পর আরামবাগের পারের ঘাটে ভাড়া-করা ঘর থেকে বাবার জিনিসপত্র সরাতে গিয়ে দুই বোন হতবাক। কয়েকটি চটের পুরোন বস্তা, আর মরচে-ধরা টিনের বাক্স থেকে যা বেরোল, তা নিয়ে শনিবার গোটা পাড়ায় শোরগোল পড়ে যায়। রহস্যের গন্ধ পেয়ে চলে আসে পুলিশও।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার উক্তি, “একজন ভিখারির কাছে ওই পরিমাণ টাকা, ভাবাই যায় না।
তাই টাকার উৎস সন্ধানে খোঁজখবর নিতেই হচ্ছে।”
নিষ্ঠাভরে পরিশ্রম করলে যে ভিক্ষাবৃত্তিতেও লক্ষ্মীলাভ হতে পারে, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন অমরবাবু। পড়শি জয়দেব মাল জানালেন, ভোর থাকতেই একটা ছেঁড়া ধুতি অথবা গামছা জড়িয়ে, ভর করে হেঁটে যেতেন বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক। মনে হত, যেন কোনও অসুস্থ মানুষ আসছেন। সেটাই টিআরপি ছিল ওই বৃদ্ধের। কোথায় না যেতেন তিনি? বাঁকুড়ার কোতুলপুর, বর্ধমানের বুলচন্দ্রপুর, উচানল। কামারপুকুর, জয়রামবাটি। আরামবাগ থেকে যে সব দূরপাল্লার বাস ছাড়ে, প্রতিদিন তার কোনও একটাতে উঠে পড়তেন। বৃদ্ধ ভিখারির কাছে ভাড়া চাইবে কে? শান্ত ভঙ্গিতে হাতটি বাড়িয়ে দিলে ক’জনই বা মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে?
বছর কুড়ি ধরে রাই কুড়িয়ে বেল করেছেন অমরবাবু। রোজগার আর সঞ্চয় তাঁর এমনই অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল, যে নিজের জন্য কখনও এক টাকা বাড়তি খরচ করেননি। বাড়িতে রান্নার পাট ছিল না। ফুটপাথের হোটেলে ব্যবস্থা ছিল। বাক্সে কয়েক ডজন নতুন ধুতি-গামছা মিলেছে। হয়তো নানা সময়ে দানে পেয়েছিলেন। কিন্তু পরেননি কখনও। শেষ নিঃশ্বাসও ফেললেন বাসেই। কোতুলপুর থেকে আরামবাগ ফেরার বাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চালক সোজা আরামবাগ হাসপাতালে বাস ঢোকান। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। নিয়মমাফিক ময়নাতদন্ত হয় দেহের।
পরিশ্রমী, সঞ্চয়ী অমরবাবু অবশ্য ব্যবসায়ে সুবিধে করতে পারেননি। আরামবাগেই তাঁর একটা ছোট শাঁখা-পলার দোকান ছিল। সেটা যখন উঠে যায়, তখন তাঁর বয়স বছর চল্লিশ। তার পরেপরেই ছেড়ে চলে যান স্ত্রী দীপালি। চার মেয়েকে প্রতিপালন করতে ভিক্ষাবৃত্তির সেই শুরু। গোড়ায় মেয়েরাও তাঁর ভিক্ষার সঙ্গী ছিল।
পরে তারা কাজ খুঁজে নিয়েছে, বিয়ে করেছে। বাবা কষ্টে থাকে, এমনই জানত তারা। শনিবার মেয়ে পার্বতী আর টগরি বাবার সম্পত্তির খোঁজ পেয়ে তাই হতবাক। বাড়িওয়ালা কার্তিক পালও এত বছর টের পাননি, কত সঞ্চয় করেছেন অমরবাবু। এ দিন অমরবাবুর বাক্স থেকে পাওয়া ১৫ হাজার টাকা নগদ আর দুটি সোনার আংটি দুই বোনকে ভাগ করে দেন কার্তিকবাবু। কিন্তু আরও দুই বোন আছে। তাদের কী হবে? “আমরা সবাই টাকা ভাগ করে নেব,” বললেন পার্বতী আর টগরি।
Khelar Khobor porte amader portale chockh rakhun
ReplyDelete